তিনি দিন টানা ভারীবর্ষণ ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে তৈ তৈ করে পানি ভারছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে, বন্যা আতংকে দিনযাপন করছেন এই উপজেলার বাসিন্দারা। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ইতিমধ্যে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অনেক ঘরবাড়ি, দোকানপাট, রাস্তাঘাট বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক রাস্তা ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে, বন্যাকবলিত হয়ে অনেকেই অবস্থান নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা সকাল থেকে তলিয়ে যাচ্ছে। দেখা দিচ্ছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, এভাবে বিরামহীনভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে শীঘ্রই বড় বন্যার সম্মুখীন হবে উপজেলাবাসী। এমন পরিস্থিতে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার কথা স্মরণ করে চিন্তিত এই উপজেলার বাসিন্দারা। সবাই মনে করছেন এভাবে বিরামহীন বৃষ্টি হলে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যাকে হার মানাবে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রের খোঁজ করছেন অনেক বানভাসী মানুষ। গবাদিপশু ও গোলার ধান নিয়ে কৃষক পরিবারে চিন্তার ভাঁজ। কেউ কেউ ইতিমধ্যে উঁচু ও শুকনো জায়গায় ধান ও গবাদিপশু সরিয়ে নিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে বিরামহীন বৃষ্টিতে উপজেলার, মেঘার কান্দির, হরিনা কান্দি, জালালপুর, রানীগঞ্জ, দাসনা গাও, কলকলি, ও জগন্নাথপুর পৌর এলাকার, ভুমি অফিস, সি/এ মার্কেট,খুমার খালি,হাসিমা বাদ,মন্দির বাড়ি, জলালপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। কোনো রাস্তায় কোমড় থেকে হাঁটুজল, কোনোটায় সবেমাত্র পানি উঠেছে। ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় পানিবন্ধী রয়েছেন অসংখ্য পরিবার। এসব এলাকার বাসিন্দারা নৌকা দিয়ে চলাচল করছেন।কিছু কিছু লোক আশ্রয় কেন্দ্র উঠছেন।,
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায় জগন্নাথপুর উপজেলা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের এলাকাগুলোও একই ভাবে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার গ্রামীণ সড়ক বন্যাকবলিত হওয়ায় পানিবন্ধী হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
জগন্নাথপুর পৌর সভার মন্দির বাড়ি হিমাংশু মোদক বলেন, আমাদের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।বিপদে আছি পরিবার নিয়ে।
ভবানীপুর গ্রামের চান মিয়া বলেন বাড়ি ঘরে পানি
বসবাসের পরিস্থিতি না থাকায় আমাদের গ্রামের আশ্রয় নিয়েছি। আমরা খুবই দুর্ভোগে রয়েছি।
জগন্নাথপুর বাদাউড়া গ্রামের শ্রীমতি রানী বলেন, “আমাদের গ্রামের রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে বসতঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে শেষপর্যন্ত বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করতে হবে। গবাদিপশু ও ধানের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে। যদি পানি বাড়ে এসব নিয়ে কোথায় যাবো। মনে মনে আশ্রয়ের স্থান খুঁজছি।
হিলালপুর গ্রামের কামাল হোসেন বলেন, বানের পানিতে আমাদের মহল্লার মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছেন। আমার দোকানেও পানি ছুঁই ছুঁই। আর পানি বাড়লে আমার দোকানের মালামাল, ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যাবে। বড় বিপাকে আছি।
এদিকে বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলাম । তিনি বলেন, ‘বন্যা বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। বন্যা মোকাবিলায় ইতোমধ্যে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। বন্যাকবলিতদের জন্য উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করে খুলে দেওয়া হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৪’শ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবৃন্দকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমি নিজে তিন দিন ধরে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করছি জেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল বন্যাকবলিত এলাকায় এসব খাবার বিতরণ করা হবে।’