জগন্নাথপুরের খবর ডেক্সঃ
১০ কোটি মানুষকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনার লক্ষ্য ধরে দেশে বহুল প্রত্যাশিত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয়েছিল। তবে কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ধীরগতির কারণে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর বাস্তবতা এখন শুধু দীর্ঘসূত্রতার দিকেই গড়াচ্ছে। এতে দেখা গেছে, মাত্র এক লাখ নিবন্ধন পেরোতেই ৯ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের। সর্বশেষ তথ্যমতে, গতকাল সোমবার পর্যন্ত দেশে ১ লাখ ১ হাজার ৩২১ জনের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। এতে মোট জমা হয়েছে ৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ টাকা। গত বছর ১৭ আগস্ট দেশে প্রথমবারের মতো সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
শুরুতে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা—নামে চারটি স্কিম দিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হয়। পরে সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘প্রত্যয়’ নামে আরও একটি নতুন স্কিম খোলা হয়, যা আগামী জুলাই থেকে কার্যকর হবে। বলা হচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠানে সদ্য যোগদান করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে পেনশন স্কিমের আওতায় আনা হবে।
এত ধীরগতির নিবন্ধন প্রসঙ্গে ওয়াকিবহাল মহল জানিয়েছে, নানা কারণে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি সর্বজনীন পেনশন স্কিম। এর প্রধানতম কারণ হচ্ছে—শুরু থেকেই দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক অপপ্রচার হয়েছে। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হয়—সরকারি দলের নির্বাচনী ব্যয় জোগানের তহবিল হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। যে কারণে জনমনেও এ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। যার ফল গড়িয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের চালু করা ওয়েবসাইটের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায়। অন্যদিকে, সর্বজনীন পেনশন স্কিম পরিচালনায় গঠন করা হয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ ৯ মাস পেরোলেও সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে তৈরি হওয়া জনমনের নেতিবাচক ধারণাকে পাল্টাতে পারেনি। এ জন্য সারা দেশে ম্যাসিভ প্রচার কার্যক্রমও দেখা যায়নি। গুটিকয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে সেমিনার-ওয়ার্কশপই ছিল তাদের তৎপরতার বড় অংশ। সম্প্রতি একটি উদ্যোগ ছাড়া মাঠপর্যায়ে এই বার্তা নিয়ে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। অনেকের দাবি, আমলানির্ভর পেনশন কর্তৃপক্ষ দিয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু আশাও করা যায় না। এসব বাস্তবতার কারণেই সর্বজনীন পেনশন স্কিমে তিমির গতি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা কালবেলাকে বলেন, এটা ঠিক, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা নিয়ে শুরুতেই অনেক রাজনীতি এবং অপপ্রচার হয়েছে। এর ফলে জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি—মানুষের এই নেতিবাচক ধারণা পাল্টাতে। আমরা এতদিন শুধু সর্বজনীন পেনশন পরিকল্পনার আপগ্রেডেশন নিয়ে কাজ করেছি। এখন আমরা সারা দেশে মাঠপর্যায়েও যেতে শুরু করেছি। খুব দ্রুতই সর্বজনীন পেনশন স্কিম তার অভীষ্ট লক্ষ্যে ফিরে আসবে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন স্কিমে জমা হয়েছে ৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে প্রবাস স্কিমে নিবন্ধন করেছেন এখন পর্যন্ত ৬৩৩ জন। প্রবাস স্কিমে এসব নিবন্ধনকারীর মোট অর্থ জমা হয়েছে ৩ কোটি ৫ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা। প্রগতি স্কিমে নিবন্ধন নিয়েছেন ১৪ হাজার ৭৮৪ জন। তারা এই স্কিমে টাকা জমা করেছেন ২৪ কোটি ২০ লাখ ১ হাজার ৫০০ টাকা। সুরক্ষা স্কিমে নিবন্ধন সেরেছেন ৩১ হাজার ৪৫৮ জন। তাদের এই স্কিমে মোট টাকা জমা পড়েছে ১৭ কোটি ৮৪ লাখ ২৪ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া সমতা স্কিমে নিবন্ধিত হয়েছে মোট ৫৪ হাজার ৪৪৬ জন। এই স্কিমে তাদের জমা টাকার মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ২৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল পাঠানো এ বিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে মাঠপর্যায়ের প্রশাসনকে যুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে করণীয় সব ধরনের উদ্যোগও রয়েছে সরকারের।