কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদার ও সালাহউদ্দিন সুজন। ছবি : সংগৃহীত
জগন্নাথপুরের খবর ডেক্সঃ
পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো ধান। তাই এর প্রতিকারে পরামর্শ পেতে কৃষক ফজলুর রহমান একগুচ্ছ ধান নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন কৃষি অফিসে। কিন্তু সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া তো দূরে থাক, কৃষি কর্মকর্তারা তাকে অফিস থেকে গালাগাল করে বের করে দেন। এ ঘটনায় অভিুযক্ত সেই উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন সুজনকে মানিকগঞ্জে থেকে দিনাজপুর অঞ্চলে বদলির পর এবার উপজেলা কৃষি অফিসার রাজিয়া তরফদারকেও ফরিদপুরের সালথায় বদলি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাতে কৃষি অধিদপ্তর থেকে তাদের বদলির এ আদেশ দেওয়া হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শহীদুল আমীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিস আদেশ কপিতে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন সুজনকে দিনাজপুর অঞ্চলের অধীনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে।
অপরদিকে আজকের তারিখে কৃষি অধিদপ্তরের এক অফিস আদেশ থেকে জানা গেছে, শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদারকে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা থেকে ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় পদায়ন করে বদলি করা হয়েছে। ওই অফিস আদেশে বলা হয়েছে, আগামী ১৬ এপ্রিল তিনি তার দায়িত্বভার হস্তান্তর করবেন। অন্যথায় ১৭ এপ্রিল থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্তি বলে গণ্য হবে।
যে হাটে প্রতিদিন বিক্রি হয় কোটি টাকার মরিচ
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) শিবালয় উপজেলা কৃষি অফিসে ক্ষতিগ্রস্ত একগুচ্ছ ধান নিয়ে পরামর্শ নিতে যান কৃষক ফজলুর রহমান। ওই সময় দায়িত্বরত কৃষি কর্মকর্তা ওই কৃষকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা এবং কৃষককে কৃষি অফিস থেকে বের করে দেয়।
ভুক্তভোগী শিবালয় উপজেলার উথলী ইউনিয়নের গহেরপুর গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান (৬৫) বলেন, এ বছর ৬০ শতাংশ জমিতে বোরো আবাদ করেছি। কিন্তু কিছুদিন ধরে পোকার আক্রমণে কচি ধানের চারা মারা যাচ্ছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে থেকে কৃষি ও কৃষকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার কথা থাকলেও তারা মাঠে যান না। তাই সকালে বাধ্য হয়ে এক গুচ্ছ ধান নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য আসি।
এ সময় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সালাউদ্দিন সুজনকে বিষয়টি জানান কৃষক। তিনি তার ধানের চারাগুলোর ছবি তুলে রাখার কথা বলেন ও জেলার কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালকের মোবাইল নম্বর চান। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওই কৃষি কর্মকর্তা।
ফজলুর রহমান ক্ষিপ্ত হয়ে কৃষককে বলেন, ‘আমি কি আপনার কামলা দিই। আপনি কি দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন। আপনি বললেই মাঠে যেতে হবে, যা পারেন করেন। আপনি বেরিয়ে যান। যদি বয়স্ক লোক না হতেন তাহলে আপনাকে দেখে নিতাম।’ এ সময় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগ দেন অফিসের অন্য স্টাফরাও। একপর্যায়ে কৃষক ফজলুর রহমানকে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। চোখের পানি মুছতে মুছতে অফিস থেকে বের হয়ে যান ফজলুর রহমান।
ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। পরে তাদের নির্দেশে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মো. শহিদুল আমিন এবং অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মো. মামুন ইয়াকুবকে নিয়ে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
সুএকাল বেলা