স্টাফ রিপোর্টারঃ
নিরাপদ অভিবাসন ও বিদেশ-ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রত্যাশা-২ প্রকল্পের উপজেলা কর্মশালায় প্রধান অতিথির ভাষণে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভূইয়া সা-আধ বলেন, নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতে চাই জনসাধারণের সচেতনতা এবং এ জন্য প্রয়োজন জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা। পাশাপাশি যারা বিদেশ থেকে প্রতারনার শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন তাদের অভিজ্ঞতা বিদেশগামীদেরকে জানালে সম্ভাব্য বিদেশগামীরাও বাস্তব চিত্র বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
সুনামগঞ্জের জগ্ননাথপুরে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম প্রত্যাশা প্রকল্পের উদ্যোগে নিরাপদ অভিবাসন ও বিদেশ-ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণের লক্ষ্যে মংগলবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ১১টায় জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালার উদ্বোধন করেন জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিয়াদ বিন ইব্রাহিম । উক্ত কর্মশালায়, জগন্নাথপুর উপজেলায় কর্মরত সরকারি বিভিন্ন দফতরের পদস্থ কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, এনজিও প্রতিনিধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, ইমাম, সমাজকর্মী, বিদেশ-ফেরত/প্রতারিত অভিবাসী, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, সংবাদকর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য এবং কর্মশালা সঞ্চালন করেন, ব্র্যাক জেলা সমন্বয়কারী এ.কে. আজাদ। কর্মশালার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা এবং উন্মুক্ত আলোচনা করেন, এমআরএসসি কো-অর্ডিনেটর মো.নজরুল ইসলাম। এসময় চার জন বিদেশ ফেরত অভিবাসী তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। কর্মশালায় অভিবাসনের বর্তমান চিত্র এবং অভিবাসনের বাঁধাসমূহ উত্তরণে নিরাপদ অভিবাসন ও ফেরত আসা অভিবাসীদের পুনরেএকত্রীকরণে করণীয় এবং নিরাপদ অভিবাসনের ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব শহিদুল ইসলাম (বকুল) বলেন,আমার এলাকার অনেকেই ভিটা বাড়ি বিক্রি করে দালানের মাধ্যমে বিদেশে যায়,কিন্তু সেখানে গিয়ে কাজ না পাওয়া ও থাকা খাওয়ার সুবিধা না থাকায় ভিসা অনুযায়ী কাজ না পাওয়ায় পুনরায় প্রতারিত হয়ে দেশে ফেরত আসতে হয়,এতে পরিবারের সবাই ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে ও ভিটা বাড়ি ছাড়তে হচ্ছে, ইউনিয়ন পরিষদে শালিসের জন্য আসে,কিন্তু কোন প্রকার প্রমান না থাকায় দালালকে ও ধরতে পারছি না। তিনি আরও বলেন,অনিয়মিত ভাবে না গিয়ে নিয়মিত উপায়ে বিদেশ গেলে অনেক লাভবান হবে এবং নির্যাতনের শিকার ও অতিরিক্ত টাকা লাগবে না।
জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইন চার্জ জয়নাল বলেন, সুনামগঞ্জের শিক্ষার হার অনেক কম এবং তারা দালালের কথায় প্ররোচিত হয়ে বিদেশ গমন করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একইসাথে মানবপাচারের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে কিন্তু কোন তথ্যই পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দালালের কোন তথ্য কিংবা কোন ডকুমেন্ট পাওয়া যায় না বিধায় ভুক্তভোগীদের সহায়তা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন দালালের কথায় কান না দিয়ে সতর্ক হয়ে জেনে বুঝে বিদেশ যেতে হবে এবং এই বিষয়ে আইনগতভাবে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক, ১৯৭২ সালের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দেশে ও দেশের বাইরে নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ব্র্যাকের বিভিন্ন কর্মসূচিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কর্মসূচি হল মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। ব্র্যাকের এই প্রোগ্রাম ২০০৬ সাল থেকে দেশের অভিবাসনপ্রবণ জেলাসমূহে বিদেশগামী নারী ও পুরুষের মাঝে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম, বিদেশ-ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণ, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, অভিবাসন খাতে অ্যাডভোকেসি ও নানাবিধ সহযোগিতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পাটলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আঙ্গুর মিয়া, কলকলিা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, চিলাউরা হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল,, মিরপুর ইউনিয়ন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব, জগনাথপুর প্রেসক্লাব সভাপতি তাজউদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক গোবিন্দ দেব, আল আমিন, মিজানুর রহমান,প্রমুখ।।