প্রচণ্ড রোদ আর তাপদাহের মধ্যে টানা ৬ ঘন্টা হাড়ভাঙা খাটুনি পরিশ্রমের পর একটু বিশ্রামের জন্য খুঁজছিলেন ছায়াময় জায়গা। কিন্তু সে সুযোগ ধারে কাছে নেই। আছে শুধু বিস্তীর্ণ হাওর আর হাওর। উপায় না পেয়ে শরীর পোড়া গরমের মধ্যেই খোলা আকাশের নিচে বসে পড়লেন। ক্লান্ত শরীরে একটু তৃপ্তির জন্য বোতল থেকে পানি পান করলেন। এ যেন গরমের মাঝে শান্তির পরশ। শুক্রবার জগন্নাথপুরের সর্ববৃহৎ নলুয়া হাওরে ধান কাটার কাজে নিয়োজিত একজন শ্রমিক কে এমন দৃশ্যে দেখা গেলো।
ওই শ্রমিকের নাম আব্দুস শহিদ। তাঁর সঙ্গে কথা বলে. জানা যায়, বোরো ধান কাটার জন্য তাঁরা ২০ জন শ্রমিক নাটোর জেলা থেকে জগন্নাথপুরে এসেছেন। তিনি বলেন, বিশাল এ হাওরের ধারে কাছে কোন বিশ্রামের জায়গা নেই। রোদে, ঝড়, বৃষ্টিতে হাওরে কাজ করতে হয় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে। তাঁর মতো শত শত কৃষি শ্রমিক জেলার অন্যতম এই হাওরের মাঠে যুগের পর যুগ কাজ করছেন।
স্থানীয় কৃষকরা এবার দাবি তুলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে কৃষকদের সুরক্ষায় ও বিশ্রামের সুযোগ করে দিতে হাওরে ‘কৃষক ছাউনি’ নির্মাণের। সম্প্রতি নলুয়া হাওরে বোরো ধান কর্তন উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই দাবি তুলেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলার ধান চাষের সব চেয়ে বড় উৎস জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওর। এ হাওর উপজেলার চিলাউড়া-হলিদপুর, কলকলিয়া ইউনিয়ন ও পৌরসভার এলাকা ছাড়াও দিরাই এবং ছাতক উপজেলায় বিস্তৃত। প্রায় ১০ হাজার হেক্টর আয়তনের এ হাওরে আবাদকৃত জমির পরিমান ৪ হাজার ৪১০ হেক্টর। চলতি বোরো মৌসুমে ওই হাওর থেকে প্রায় ২৮ হাজার ৩২০ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে।
কৃষকরা জানান, বিশাল এ হাওরজুড়ে নেই বিশ্রামের নির্দিষ্ট কোন স্থান। তীব্র গরম, ঝড়বৃষ্টি কিংবা বজ্রপাতের সময়ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কৃষকদের হাওরে কাজ করতে হয়। ফলে প্রতি বছরেই নানা বিপত্তিকর অবস্থায় পড়তে হয় কৃষকদের। ঘটে প্রাণহানির ঘটনা। এ সব প্রতিকূল অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে ও বিশ্রামের সুযোগ করে দিতে হাওরের বুকে ‘কৃষক ছাউনি’ নির্মাণের দাবি জানান কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষক দিলদার মিয়া বলেন, ঝড়-বৃষ্টি বজ্রপাতেও আমাদেরকে মাঠে কাজ করতে হয়। কোথাও নেই একটু নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বৃষ্টি শুরু হলে কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। নলুয়ার হাওরে দুই একটি ছাউনি নির্মাণ করা হলে নিরাপদে বিশ্রাম নিতে পারব।
আরেক কৃষক সুনীল দাস বলেন, কৃষক ছাউনি নির্মাণ করা হলে হাওরের কৃষকরা বজ্রপাতের সময় আশ্রয় নিতে পারবেন। বিশ্রামের নির্দিষ্ট কোন স্থান না থাকায় রোদ বৃষ্টিতে হাওরের খোলা আকাশের নিচে বসে খাওয়া দাওয়া করতে হয়। কৃষকদের জন্য হাওরে ছাউনি নির্মাণের দাবি জানাই।
চিলাউড়া-হলিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, কৃষকরা সাধারণত সারাদিন মাঠে কাজ করেন। দুপুরে বাড়ি যাওয়ার সময় পান না। তাই রোদে কিংবা বৃষ্টির সময় নিরাপদে বসার কোন জায়গা নেই। হাওরগুলোতে যদি কৃষক ছাউনি নির্মাণ করা হয় কৃষকেরা খুবই উপকৃত হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ বলেন, আমরা প্রায়ই সংবাদমাধ্যমগুলোতে দেখি, কৃষকরা মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মারা যাচ্ছেন। হাওরে যদি ছাউনি নির্মাণ করা হয়- কৃষকরা কিছুটা হলেও বজ্রপাত ও ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা পাবে। ছাউনি নির্মাণে কৃষকদের পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।
এদিকে গত ১৮ এপ্রিল নলুয়ার হাওরে বোরো ধান কর্তন উৎসবে সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপির নিকট কৃষকদের পক্ষ থেকে কৃষক ছাউনি নির্মাণ ও নলকূপ স্থাপনের দাবি জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমদ। দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য এম এ মান্নান কৃষকদের আশ্বস্ত করেন।