স্টাফ রিপোর্টার ::
হাওর-বাঁওর ও সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবে খ্যাত সুনামগঞ্জ জেলার আজ ৪০ বছর। ১৮৮৪ সালের এইদিনে মহকুমা থেকে জেলায় রূপান্তরিত হয় সুনামগঞ্জ। বাংলাদেশের উত্তরপূর্ব সীমান্ত খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের কোলঘেঁষে সুনামগঞ্জ জেলার অবস্থান। এ জেলার উত্তরে রয়েছে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে হবিগঞ্জ জেলা, পূর্বে সিলেট জেলা এবং পশ্চিমে নেত্রকোণা জেলা।
৩ হাজার ৭৪৭.১৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ জেলায় রয়েছে ১২ টি উপজেলা। সর্বশেষ ২০২১ সালে ২৬ জুলাই নিকাবের ১১৭তম সভায় মধ্যনগর থানা থেকে উপজেলায় স্বীকৃতি পায়। সুনামগঞ্জের ইতিহাস অতিপ্রাচীন। প্রতিবছর সুনামগঞ্জের হাওরবেষ্টিত তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার ভারতের খাসিয়া, মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত পর্যটন কেন্দ্রগুলো ভিড় জমান পর্যটকরা। যার মধ্যে তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর, এশিয়ার বৃহত্তম শিমুল বাগান, স্বচ্ছ পানির নদী যাদুকাটা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরের আগত ভ্রমণ পিপাসুরা।
প্রাচীন ইতিহাস থেকে অনুমান করা হয়, সুনামগঞ্জ জেলার সমগ্র অঞ্চল এককালে আসামের কামরূপ বা প্রাগজ্যোতিষপুর রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। জেলা তথ্যসূত্রে জানা যায়, ‘সুনামদি’ নামক জনৈক মোগল সিপাহীর নামানুসারে সুনামগঞ্জের নামকরণ করা হয়েছিল। ‘সুনামদি’ (সুনাম উদ্দিনের আঞ্চলিক রূপ) নামক উক্ত মোগল সৈন্যের কোন এক যুদ্ধে বীরোচিত কৃতিত্বের জন্য স¤্রাট কর্তৃক সুনামদিকে হিসেবে এখানে কিছু ভূমি পুরস্কার হিসাবে দান করা হয়। তাঁর দানস্বরূপ প্রাপ্ত ভূমিতে তাঁরই নামে সুনামগঞ্জ বাজারটি স্থাপিত হয়েছিল। এভাবে সুনামগঞ্জ নামের ও স্থানের উৎপত্তি হয়েছিল বলে মনে করা হয়ে থাকে। এ জনপদে ঐতিহ্য সংস্কৃতি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের সরব উপাদান।
আউল-বাউলের চারণভূমি সুনামগঞ্জ তাঁর ঐতিহ্যের ধারা থেকে আজও বিচ্যুতি হয়নি। লোকসাহিত্যে মহাভারতের অনুবাদক মহাকবি সঞ্জয় (পঞ্চদশ শতক), কুবের আচার্য্য, ঈশান নাগর (বৈষ্ণব কবি), দিব্য সিংহ (লাউড় রাজ্যের স্বাধীন রাজা) থেকে শুরু করে সৈয়দ শাহনূর, সৈয়দ হোসেন আলম, রাধারমণ, মরমি কবি হাছনরাজা, দূর্বীণ শাহ, কালাশাহ, এলাহী বক্স মুন্সী, শাহ আছদ আলী, পীর মজির উদ্দিন, আফজল শাহ, শাহ আবদুল করিম এ জেলারই সন্তান।
তবে ৪০ বছরে সুনামগঞ্জ জেলায় এসেছে অনেক পরিবর্তন, আধুনিক সভ্যতার পাশাপাশি শিক্ষা ও দক্ষতা বাড়াতে বিরাট পরিবর্তন এসেছে হাওরের সুনামগঞ্জ জেলায়। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে শুরু করে হাওরের বুকে হয়েছে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, নার্সিং ইনস্টিটিউটসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠান, যাতায়াত ব্যবস্থা হয়েছে উন্নত।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক আনোয়ারুল হক বলেন, সুনামগঞ্জ জেলা হওয়ার ৪০ বছর হয়ে গেছে বিশ^াস হচ্ছে না। মনে হচ্ছে ওইদিন না আমরা আনন্দ ফুর্তি করে সুনামগঞ্জ মহকুমা থেকে জেলা গেলাম। ৪০ বছরে সুনামগঞ্জ জেলা অনেক উন্নত হয়েছে, তবে এটি হাওরের জেলা, সংস্কৃতির জেলা সেই ঐতিহ্যটা আজও ধরে রেখেছে।
প্রবীণ সাংবাদিক আকরাম উদ্দিন বলেন, সুনামগঞ্জ জেলায় উন্নীত হওয়ার ৪০ বছর পূর্ণ হয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর থেকে বছর বছর যেভাবে এই জেলার উন্নয়ন হওয়ার আশাবাদী ছিল মানুষজন। কিন্তু সেই আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। বিগত ১০ বছরে জেলার কিছু কিছু জায়গায় কিছুটা উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এই উন্নয়নেও আমরা মনে করছি জেলার বেশ উন্নয়ন হয়েছে। উদযাপন হোক ৪০ বছরপূর্তি, সেই সাথে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক এটাই প্রত্যাশা করি।
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আজ শুক্রবার সকালে আলোচনা ও র্যালির আয়োজন করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ সুনামগঞ্জ মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত হয়। যার ৪০ বছর পূর্ণ হল। দিনটি উদযাপনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা ও র্যালির আয়োজন করা হয়েছে।